Wellcome to National Portal
বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ২০ মার্চ ২০২০

নওগাঁয় চুনাপাথর খনির সন্ধান


প্রকাশন তারিখ : 2016-11-14

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় দেশের সবচেয়ে বড় চুনাপাথর খনির সন্ধান পেয়েছে ভূতাত্তি্বক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি)। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এ খনি পাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এর ফলে সিমেন্ট কারখানার জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল দেশেই পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলেন জানান তিনি। 
গতকাল দুপুরে হঠাৎ করেই সাংবাদিকদের নিজের কার্যালয়ে ডেকে প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'আমরা একটা সুখবর দিতে চাই, কিছুক্ষণ আগে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ চুনাপাথর খনি আবিষ্কৃত হয়েছে।' তিনি বলেন, বদলগাছী উপজেলার বিলাসবাড়ি ইউনিয়নের তাজপুর গ্রামে মাটির দুই হাজার ২২৪ ফুট গভীরে চুনাপাথরের সন্ধান মিলেছে। খনিটির সম্ভাব্য বিস্তৃতি ৫০ বর্গকিলোমিটার।
জিএসবির মহাপরিচালক ড. নেহাল উদ্দিন প্রতিমন্ত্রীর কক্ষেই ছিলেন। তিনি সমকালকে জানান, গত ফেব্রুয়ারি থেকে তারা এ এলাকায় অনুসন্ধান কাজ শুরু করেন। এখন পর্যন্ত খনির পুরুত্ব ৬১ ফুট পাওয়া গেছে। এখনও অনুসন্ধান কাজ চলছে। 
নসরুল হামিদ বলেন, খনিটি বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হবে কি-না সে 
বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ করবে জিএসবি। এ জন্য দেড়-দুই বছর লাগতে পারে। লাভজনক বিবেচিত হলে বাণিজ্যিকভাবে চুনাপাথর উত্তোলনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এর আগে গত শতকের ষাটের দশকে জয়পুরহাটে চুনাপাথরের খনি আবিষ্কৃত হলেও বাণিজ্যিকভাবে তা লাভজনক না হওয়ায় পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। 
আশাবাদ ব্যক্ত করে নসরুল হামিদ বলেন, যেহেতু নওগাঁর খনিটির গভীরতা খুব বেশি নয়, তাই এ খনি থেকে পাথর উত্তোলন লাভজনক হতে পারে। তিনি বলেন, 'দেশে সিমেন্ট কারখানায় কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত সব চুনাপাথর আমদানি করা হয়। নওগাঁর খনির উত্তোলন শুরু হলে চুনাপাথর আমদানি করতে হবে না, বরং রফতানি করা সম্ভব হবে।' সুড়ঙ্গ পদ্ধতিতে চুনাপাথর উত্তোলনের কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানান নসরুল হামিদ। 
খনির বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম সমকালকে বলেন, নওগাঁয় চুনাপাথর পাওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ বেঙ্গল বেসিনের স্ট্যাবল শেলের অন্তর্গত এ অঞ্চলে চুনাপাথর রয়েছে। নওগাঁ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী বগুড়া, নাটোর, গাইবান্ধা, পাবনা, কুষ্টিয়াসহ পুরো বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে চুনাপাথরের অস্তিত্ব রয়েছে। তিনি বলেন, জয়পুরহাটে ষাটের দশকেই খনি খননের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। ভূ-অভ্যন্তরের তাপমাত্রা অনেক বেশি হওয়ায় সেই প্রকল্প পরিত্যক্ত হয়। নওগাঁয় যে গভীরতায় চুনাপাথর পাওয়া গেছে সেখানেও এমন বিষয় ঘটতে পারে জানিয়ে বদরুল ইমাম বলেন, জিএসবির বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখা উচিত। চুনাপাথরের এ স্তরটির উত্তর-পশ্চিম দিকে গভীরতা কম, দক্ষিণ-পূর্ব দিকে গভীরতা বেশি বলে জানান এই ভূতাত্তি্বক। নওগাঁয় প্রাপ্ত খনিটি লাভজনক হতেও পারে জানিয়ে তিনি জিএসবিকে পরামর্শ দেন, আরও কম গভীরতায় চুনাপাথরের স্তর খুঁজে দেখতে, যাতে সহজেই পাথর উত্তোলন করা যায়। 
জানা গেছে, দেশে ত্রিশটির বেশি সিমেন্ট কারখানায় বছরে উৎপাদন হচ্ছে প্রায় দুই কোটি টন সিমেন্ট। এসব কারখানার কাঁচামালের বেশির ভাগ চাহিদা মেটানো হয় ক্লিঙ্কার আমদানি করে। লাফার্জ-সুরমা মেঘালয় থেকে সরাসরি পাথর আমদানি করে। কাদামাটির সঙ্গে চুনাপাথর মিশিয়ে কারখানায় পুড়িয়ে তৈরি হয় ক্লিঙ্কার। বদলগাছি নিয়ে প্রত্যাশা পূরণ হলে ক্লিঙ্কার আমদানির বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হবে বলে সরকার আশা করছে।
১৯৫৯ সালে বগুড়ার কুচমায় তেল অনুসন্ধান কূপ খনন করতে গিয়ে এক হাজার ৭৭৪ মিটার গভীরে দেশের প্রথম ভূগর্ভস্থ চুনাপাথরের খনি চিহ্নিত করা হয়। তবে সেখান থেকে পাথর উত্তোলন করা যায়নি।
ষাটের দশক থেকে বিভিন্ন সময়ে খনন চালিয়ে জয়পুরহাটের জামালগঞ্জে ৬ দশমিক ৪৭ বর্গকিলোমিটার এলাকায় মাটির ৫১৫-৫৪১ মিটার গভীরে ২৭০ মিলিয়ন টন উন্নত মানের চুনাপাথরের মজুদ পাওয়া গেলেও উত্তোলন ব্যয়বহুল হওয়ায় তা তোলা হয়নি। ১৯৬৫ সালে ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে সরবরাহের জন্য সিলেটের টাকেরঘাটে প্রথমবারের মতো চুনাপাথর উত্তোলন শুরু হয়। সেই মজুদ গত শতকেই শেষ হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি আলমগীর কবির সমকালকে বলেন, চুনাপাথর পোড়ানোর পর তৈরি হয় ক্লিঙ্কার। যা সিমেন্ট কারখানার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। দেশে চুনাপাথর ও ক্লিঙ্কার দুটোই আমদানি করা হয়। প্রতি বছর দেশে ২৪০ লাখ টন ক্লিঙ্কার আমদানি করা হয়। এতে বছরে প্রায় ৭ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা ব্যয় হয়। বর্তমানে ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, চীন, কোরিয়া, জাপান, ইরান ও ওমান থেকে ক্লিঙ্কার আমদানি করা হচ্ছে। এ ছাড়া ভারত থেকে লাফার্জ ও ছাতক সিমেন্ট কারখানায় সরাসরি চুনাপাথর আমদানি করা হচ্ছে।